Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ভাইকে কাঁধে নিয়ে ছুটে চলা ফিলিস্তিনি শিশু জাদোআ

 

 
 

ভাইকে কাঁধে নিয়ে ছুটে চলা ফিলিস্তিনি শিশু জাদোআ — গাজার যুদ্ধ বাস্তবতার হৃদয়বিদারক প্রতিচ্ছবি

ভিডিওটি যা বিশ্বকে কাঁদিয়েছে

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি হৃদয় ছুঁয়ে নেওয়া ভিডিও চোখে পড়ে সবার। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ৮ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি শিশু “জাদোআ” তার ছোট ভাই “খালিদ”-কে কাঁধে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছে। শিশুটি বারবার “ইয়া আল্লাহ” বলে চিৎকার করে হাঁটছে। এই ভিডিও ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে।

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শুরু হয় এক শিশুর জীবনযুদ্ধ

ভিডিওতে দেখা যায়, জাদোআ তার বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিল। ঠিক সেই সময় ইসরায়েলি বিমান থেকে বোমা বর্ষণ শুরু হয়। মুহূর্তেই চারপাশ ধ্বংস ও আতঙ্কে পরিণত হয়। সে নিজের পরিবারকে খুঁজতে থাকে এবং ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই ভাইকে কাঁধে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে, যাতে তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে পারে।

জাদোআর পরিবারের বিচ্ছিন্নতার করুণ গল্প

বাবার ভাষ্যে সেই মুহূর্ত

জাদোআর বাবা বলেন, তারা দক্ষিণ গাজায় বসবাস করতেন। বোমা বর্ষণের সময় সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং তিনি একটি ভবনের প্রবেশপথে লুকিয়ে ছিলেন। প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি আটকে পড়েন। জাদোআ তার সাথেই ছিল, কিন্তু দৌড়ে পালিয়ে যায়।

মাকে খুঁজে না পাওয়ার বেদনা

পরে জাদোআ তার মাকে খুঁজতে যায়, কিন্তু তাকে আর পায় না। এরপর সে দেখতে পায় তার ছোট ভাই খালিদ একটি ফাঁকা জায়গায় একা কাঁদছে।

১০ কিমি পথ হেঁটে ভাইকে বাঁচাতে ছুটে চলা

জাদোআ তখন ভাইকে কাঁধে তুলে নেয় এবং প্রায় ১০ কিমি পথ হেঁটে যায়। এই দুর্দান্ত মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করেন ফটোজার্নালিস্ট আহমেদ হিউনিস এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।

মায়ের প্রতিক্রিয়া: আনন্দ ও ব্যথা একসাথে

ভিডিও দেখে জাদোআর মা নোহা মাহমুদ কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, হামলার সময় তাদের পরিবারকে তেল হাওয়া এলাকায় স্থানান্তরিত হতে হয়েছিল। খাদ্যের অভাব ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিশুরা আতঙ্কে ছিল। তার স্বামী তখন খাবার আনতে বাইরে ছিলেন এবং ঠিক তখনই হামলা হয়।

তিনি বলেন, “এই পথ পার হওয়া অনেক পুরুষের পক্ষেও কষ্টকর। অথচ জাদোআ, একজন শিশু, তা করে দেখিয়েছে।” সাহায্যকারীদের সহায়তায় তিন দিন পর পরিবার আবার একত্রিত হয়।

আহমেদ হিউনিস কেন ভিডিওটি করেন?

ফটোজার্নালিস্ট আহমেদ হিউনিস বলেন, “অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন কেন এসব ছবি তুলি। এসবই হচ্ছে বিশ্বের সামনে গাজার বাস্তবতা তুলে ধরার উপায়।” এই ভিডিওটি যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা ও মানবিক ক্ষতির বাস্তব রূপ দেখিয়েছে, যা বহু মানুষের আবেগ ছুঁয়ে গেছে।

এই ভিডিও আমাদের কী শেখায়?

এই ঘটনা যুদ্ধের বর্বরতা এবং শিশুদের উপর এর নির্মম প্রভাবের একটি হৃদয়বিদারক উদাহরণ। ফিলিস্তিন ও গাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা থাকলেও, এই ভিডিও মানুষকে মনে করিয়ে দেয়—যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের নয়, এটি একটি শিশুর কান্না, পরিবারের বিচ্ছিন্নতা এবং মানবিকতার ওপর এক গভীর আঘাত।

উপসংহার: মানবতা এখনও বেঁচে আছে জাদোআর মতো শিশুদের মাঝে

জাদোআর সাহসিকতা আমাদের শেখায়, ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ ও সহানুভূতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যায় এমন ছোট শিশুদের মাধ্যমেও। এই ঘটনা বিশ্বকে একটি নতুন করে ভাবতে শেখায় — যুদ্ধ থামাতে হলে আমাদের আগে মানবতা জাগাতে হবে।

আপনার মতামত জানান

আপনার মন ছুঁয়ে গেছে? মন্তব্যে জানিয়ে দিন। দয়া করে পোস্টটি শেয়ার করুন, যাতে আরও মানুষ জানতে পারে গাজা ও নিরীহ শিশুদের বাস্তবতা।

Post a Comment

0 Comments